নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে জেল বন্দি ইরানের নোবেল জয়ী

 

নার্গিস মোহাম্মদী
নোবেল কমিটি নার্গিস মোহাম্মদীকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দিয়েছে। ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সকলের জন্য মানবাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য তার লড়াইয়ের জন্য তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। নার্গিস ৬ অক্টোবর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। যে সময়ে মোহাম্মদী এই পুরস্কার পাচ্ছেন, তখনও তিনি ইরানে এক কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

 নার্গিস মোহাম্মদী কে?

 নার্গিস মোহাম্মদী ছিলেন একজন ইরানী মানবাধিকার কর্মী। তিনি ১৯৭২ সালের ২১ এপ্রিল ইরানের জাঞ্জানে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে কোরভেহ (কুর্দিস্তান), কারাজ ও ওশনাভিয়েহ শহরে। তিনি ইমাম খোমেনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পোড়াশোনা করেন। তিনি শিক্ষাজীবন থেকেই সংবাদপত্রে নারীর অধিকার নিয়ে লেখালেখি করতেন।   

                         তার কর্মজীবন                                  

তিনি বেশ কয়েকটি সংস্কারবাদী সংবাদপত্রের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। "দ্য রিফর্মস, দ্য স্ট্র্যাটেজি, অ্যান্ড দ্য ট্যাকটিকস" নামে রাজনৈতিক প্রবন্ধের বই প্রকাশ করেন। ২০০৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী "শিরিন এবাদির" নেতৃত্বে "ডিফেন্ডারস অব হিউম্যান রাইটস" সেন্টারে যোগ দেন। পরে তিনি এই সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। 

                           ওনার বন্দি জীবন                            

নার্গিস ইরান সরকারের সমালোচনা করায় সর্বপ্রথম ১৯৯৮ সালে গ্রেফতার হন। এক বছর তিনি মুক্তি পেয়ে যান। আবার ২০১০ সালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। কারাদণ্ড দেওয়ার পর ২০১১ সালে আবার তাকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে’ কাজ করার দায়ে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ২০১২ সালে সাজা কমিয়ে ৬ বছর করে আদালত। এরপর ব্রিটিশ সরকারের সহায়তায় তাকে মুক্তির আবেদন করা হলে ৩১ জুলাই ২০১২ নার্গিস মোহাম্মদী কারাগার থেকে মুক্তি পান।                                                                     ২০১৫ সালের ৫ মে তাকে আবারও নতুন অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৯ সালে নার্গিস তেহরানের এভিন কারাগারে চিকিৎসা সেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন, যেটা প্রত্যেক কারা বন্ধীর অধিকার। ২০২০ সালে কারাগারে কোভিডে মহামারী ছাড়িয়ে পড়ে। এর ৮ অক্টোবর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।                                   ২০২১ সালে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইরান সরকারের বিরুদ্ধে একটি ভিডিও প্রকাশ করায় তাকে আবার আটক করা হয়। আর তখন থেকে এখন পর্যন্ত তিনি ইরানের কারাগারে বন্দি আছেন।                                      

                অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন                 

নার্গিস মোহাম্মদী ইরানের কারাগারে বন্দিদের ব্যবহার এবং নারীদের সাথে দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। মোহাম্মদী তার সক্রিয়তার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে "পার অ্যাঙ্গার অ্যাওয়ার্ড, ওলোফ পালমে অ্যাওয়ার্ড, ইউনেস্কো/গুইলারমো ক্যানো ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড এবং পেন/বারবি ফ্রিডম টু রাইট অ্যাওয়ার্ড।                       তিনি বিবিসির 100 অনুপ্রেরণামূলক এবং প্রভাবশালী নারীদের একজন হিসাবেও নামকরণ করেছিলেন। অনেক চ্যালেঞ্জ এবং কারাগারের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, মোহাম্মদি ইরানে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এছাড়া নার্গিস মোহাম্মদী একজন ইরানী মানবাধিকার কর্মী এবং ডিফেন্ডারস অফ হিউম্যান রাইটস সেন্টার (DHRC) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছাড়াও তিনি ইরানে মৃত্যুদণ্ড বাতিল এবং বন্দীদের অধিকার রক্ষার জন্য একজন উকিল ছিলেন। এই কাজের জন্যও তিনি অনেকবার জেলে বন্দি হয়ে ছিলেন। 


                            





 


                                                                                   

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হোয়াটসঅ্যাপ ভারতে তার পরিষেবাগুলি বন্ধ করার "হুমকি" দিয়েছে, এনক্রিপশন মামলায় দিল্লি হাইকোর্টে বললো এই কথা

জেনে নিন ভারতীয় রেল সংক্রান্ত মজার তথ্য

ভারতের সবচেয়ে বয়স্ক হাতি "বিজুলি প্রসাদ" ৮৯ বছর বয়সে জীবন যাত্রা শেষ করলো