জেনে নিন ভারতীয় রেল সংক্রান্ত মজার তথ্য
ভারতীয় রেলের নেটওয়ার্ক সারা বিশ্বে খুব বিখ্যাত। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ পর্যটক রেলপথে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করে। ভারতীয় রেলওয়েকে দেশের লাইফ লাইনও বলা হয় থাকে। কারণ এই পরিবহন মাধ্যমটি সারা দেশে বিস্তৃত। রেলপথের কারণে দেশের যেকোনও প্রান্তে যাতায়াত করা প্রতিটি মানুষের জন্য খুবই সহজ হয়ে গেছে।
তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক ভারতীয় রেল সংক্রান্ত কিছু তথ্য..
ভারতীয় রেলের কাঠামো
স্বাধীনতার আগে ও পরে রেল ব্যবস্থা পুরোপুরি বেসরকারি সংস্থা দ্বারা চালনা করা হতো। পরে 1951 সালে সারাদেশে রেল ব্যবস্থা কে পুনঃগঠন করে প্রথমে 6 টি জোনে ভাগ করে ভারত সরকার অধিগ্রহণ করে নেয়। যা আজ বর্তমানে 18 টি জোনে ও 70 টি ডিভিশনে ভাগ করা আছে।
ভারতের যে 18 টি জোন রয়েছে সেগুলি হল
• সেন্ট্রাল রেলওয়ে
• পূর্ব মধ্য রেলওয়ে
• ইস্ট কোস্ট রেলওয়ে
• পূর্ব রেল
• কোঙ্কন রেলওয়ে
• উত্তর মধ্য রেলওয়ে
• উত্তর পূর্ব রেল
• উত্তর পশ্চিম রেলওয়ে
• উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে
• উত্তর রেলওয়ে
• দক্ষিণ মধ্য রেলওয়ে
• দক্ষিণ কোস্ট রেলওয়ে
• দক্ষিণ পূর্ব মধ্য রেলওয়ে
• দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে
• দক্ষিণ পশ্চিম রেলওয়ে
• দক্ষিণ রেলওয়ে
• পশ্চিম মধ্য রেলওয়ে
• পশ্চিম রেলওয়ে
Kolkata Metro |
ভারতে মেট্রো রেল পরিষেবা
এছাড়া ভারতে Metro rail পরিষেবাও রয়েছে। 1972 সালে কলকাতা মেট্রো রেলওয়ের ভিত্তিপ্রস্তর 29 তারিখে স্থাপন করা হয়। 1984 সালে 24শে অক্টোবর, কলকাতায়, ভারতের প্রথম মেট্রো চালু করা হয়েছিল। এবং বর্তমানে 15 টি শহরে বর্তমানে মেট্রো রেল চালু আছে ও আরও চালু হওয়ার পথে রয়েছে।
ভারতীয় রেল ব্যবস্থার ও পরিকাঠামো স্থাপন
•প্রথম রেল ইঞ্জিন কারখানা 1950 সালে চিত্তরঞ্জনে স্থাপন করা হয়েছিলো।
•1955 সালে মাদ্রাজে ভারতের প্রথম রেলকোচ নির্মাণ কারখানা স্থাপন করা হয়েছিল।
•ভারতীয় রেলওয়ের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন ছিল মুম্বাইতে অবস্থিত বরিবন্দর। যেটা তৈরি করেছিল 'দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলা রেলওয়ে'।এই স্টেশনটি ১৮৮৮ সালে ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস হিসাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে এই রেলওয়ে স্টেশনটির নাম পরিবর্তন করে ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস করা হয়েছে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত রেলস্টেশনটি এই নামেই পরিচিত।
দেশের রেল ব্যবস্থা শুরুর দিক
মূলত ভারতে প্রথম 1853 সালে রেল চালু হলেও, তারও আগে 1837 সালে মাদ্রাজে ভারতের প্রথম বাষ্পচালিত রেল চালু হয়ে ছিলো। যা শুধু মালপত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসার কাজে ব্যবহার করা হতো। এরপর ভারতের প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেনটি ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল বোম্বের বোরিবন্দর থেকে থানের মধ্যে চালানো হয়েছিল। এই ট্রেনটি চালিয়েছিলেন সাহিব, সুলতান এবং সিন্ধু নামের তিনজন ব্যক্তি। ভারতে এই ট্রেনটি উদ্বোধনের পর এতে ৪০০ জন যাত্রী ভ্রমণ করেছিল।
দেশে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন
এরপর 1925 সালে, ভারতের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন বোম্বে থেকে চালু করা হয়ে ছিলো। যা DC ট্র্যাকশনে চালানো হয়ে ছিলো। যা আজ বর্তমানে AC ট্র্যাকশনে চালানো হয়ে থাকে। যদিও ইতিহাস বলে যে ব্রিটিশরা ভারতে ট্রেন নেটওয়ার্ক এনেছিল, কিন্তু এর পিছনে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল। ব্রিটিশরা পণ্য চলাচল সহজ করার জন্য রেলওয়ে নেটওয়ার্ক চালু করে।
ভারতীয় রেলওয়ের মাসকট
আপনি নিশ্চয়ই রেলস্টেশনের আশেপাশে একটি হাতির ছবি দেখেছেন, যেটি হাতে একটি লণ্ঠন নিয়ে সবুজ আলো দেখায়। খুব কম মানুষই জানেন যে এই গার্ডের নাম ভোলু এবং এটি ভারতীয় রেলওয়ের মাসকট হিসাবে বিবেচিত হয়। ভারতীয় রেলওয়ের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভোলু গার্ডের সঙ্গে পরিচয় করানো হয়। যার পরে ভারতীয় রেল ২০০৩ সালে ভোলুকে তার ম্যাসকট হিসাবে বেছে নিয়েছিল।
রিজার্ভেশনের জন্য প্রথম কম্পিউটারের ব্যবহার
আজ অনলাইন মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনও কোণে বসে রিজার্ভেশন সম্ভব। কিন্তু আগে এটা এত সহজ ছিল না। ১৯৮৬ সালে নতুন দিল্লিতে রিজার্ভেশন করার জন্য প্রথমবারের মতো কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়েছিল। এর আগে বছরের পর বছর ধরে ম্যানুয়াল রেজিস্ট্রির মাধ্যমে রিজার্ভেশন করতে হত, এতে অনেক সময় যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হত।
যে ট্রেনগুলি গতির জন্য বিখ্যাত
Gatiman Express |
ভারতীয় রেলওয়ের অনেক ট্রেন রয়েছে যা তাদের গতির জন্য পরিচিত। গাতিমান এক্সপ্রেস, ভারতের প্রথম দ্রুততম ট্রেন হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। যা নতুন দিল্লী থেকে ঝাসি পর্যন্ত যাত্রা করে। এই ট্রেন তার সর্বোচ্চ গতি 160 km প্রতি ঘন্টায় চলে।
Bandebharat Express |
এর পরই আসে বন্ধেভারত এক্সপ্রেস, যার গতিও প্রায় একই অর্থাৎ 160 কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় চলে। বর্তমানে 41 টি বন্ধেভারত ট্রেন চলছে। যার মধ্যে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হাওড়া একটি বন্ধেভারত এক্সপ্রেস রয়েছে।
দেশের দীর্ঘতম রেলওয়ে প্লাটফর্ম
আমাদের দেশের দীর্ঘতম প্ল্যাটফর্ম হুবলি জংশনে রয়েছে। এর আসল নাম হল শ্রী সিদ্ধরুধা স্বামীজি রেলওয়ে স্টেশন, যা কর্ণাটক রাজ্যে অবস্থিত। এই জংশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০৫ মিটার, যা ভারতের পাশাপাশি বিশ্বে সর্বাপেক্ষা দীর্ঘতম।
দেশের সবচেয়ে ছোট নামের স্টেশন
খুব কম লোকই হয়তো জানেন যে ভারতে এমন একটি স্টেশন আছে যার নাম আইবি। এটিকে ভারতের সবচেয়ে ছোট নামের স্টেশনও বলা হয়। কথিত আছে যে এটি ভারতের একমাত্র রেলওয়ে স্টেশন যার নাম মাত্র দুটি বর্ণমালার। স্টেশনটি ওড়িশা রাজ্যে অবস্থিত।
সবচেয়ে বড় নাম সহ স্টেশন
ভারতের সবচেয়ে বড় নামের স্টেশনটিও খুব বিখ্যাত। এই স্টেশনের নাম ভেঙ্কটানারসিমহারাজুভারিপেটা। এটি অন্ধ্রপ্রদেশে অবস্থিত। এই স্টেশনটি দেশের সবচেয়ে বড় নামের স্টেশন হিসেবে গণ্য হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে উচু রেল ব্রিজ
Chenab Bridge |
ভারতের জম্মু কাশ্মীর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে চেনাব নদীর উপরে একটি রেল ব্রিজ তৈরি হয়েছে, যা সারা বিশ্বের উচ্চতম রেল ব্রিজ। এর উচ্চতা নদী থেকে 359 মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এই রেল ব্রিজ চালু হলে দেশের অন্যান্য রাজ্য কাশ্মীরের সাথে রেলের সাহায্যে সহজে যুক্ত হয়ে যাবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন