রাজীব গান্ধীর সময়ের সব থেকে বড়ো কেলেঙ্কারি








বোফর্স, নামটা শুনলে আমাদের 1999 এর কার্গিল যুদ্ধের কথা মনে পড়ে যায়, আর মনে পড়বে নাই বা কেনো? 1999 সালের যুদ্ধে এই যুদ্ধাস্ত্র টি ভারত কে জয়ী করিয়ে ছিলো। আজ আমরা যে ঘটনা সম্পর্কে জানবো তা এই হাতিয়ার কে নিয়ে এক বিশাল বড়ো রকমের কেলেঙ্কারি কে নিয়ে।                                        1947 সালে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়ে যাবার পরে তিনটি যুদ্ধ লড়াই করেছিলো। এর মধ্যে আমাদের সেনা বুঝতে পেরে ছিলো যে যুদ্ধে যে পুরোনো কামান ব্যবহার করা হচ্ছিলো তা আর ব্যবহার করা যাবে না, তাই তারা নতুন ধরণের অস্ত্রের খোঁজ করতে শুরু করে।  

বোফর্স কোম্পানি                                                    এরই মধ্যে 1980এর দশকে সুইডেনের এক কোম্পানী বোফর্স সংস্থা 155mm এর এক কামান তৈরি করে। আর তারা যখন জানতে পারে যে ভারত বিশাল পরিমাণে অত্যাধুনিক কামান কিনতে চায়, তখন সুইডেনের এই সংস্থা টি চেষ্টা করে যে ভারত যাতে তাদের অস্ত্র কেনে।                                                        

সময়টা ছিলো 24 মার্চ, 1986, ভারত সরকার এবং সুইডিশ অস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থা "এবি বোফর্সের" মধ্যে 1,437 কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে 400টি 155 মিমি হাউইটজার কামান সরবরাহ করার কথা ছিলো।     

      বোফর্স কি                                                                  বোফর্স হল আর্টিলারি কামান, যা সুইডেনের বোফর্স সংস্থা 1986 সালে তৈরি করেছে। এই কামান ভারতে 1980 থেকে 1999 সালের মধ্যে ভারতে আমদানি করে আনা হয়। তবে বর্তমানে এখন এর স্বদেশী ভার্সন ব্যবহার করা হয়, যার নাম হল "ধনুস" । 

কেলেঙ্কারি ফাঁস                                                     এর পর একটা বছর কেটে যায় সালটা ছিলো 1987, সুইডেনের এক রেডিও স্টেশনে সন্ধ্যা বেলা এক পোড কাস্টে ভারতের বোফর্স কামান কেনা নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করে, যেখানে দাবি করা হয় যে, ভারত যে সংস্থা কে 155mm এর কামান কিনতে দিয়েছিলো সেই সংস্থা ভারতের কিছু রাজনৈতিক নেতা, প্রতিরক্ষা দপ্তরের আমলাদের 60 কোটি টাকার ঘুষ দেয় যাতে কামান সরবরাহ করার বরাত সেই সংস্থা টি পায়। সেই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন "রাজীব গান্ধী"।  

যৌথ সংসদীয় কমিটি কমিটি                                      20 এপ্রিল, রাজীব গান্ধী এই বিষয় একটি বক্তব্য রাখে। তিনি বলেন যে এই বিষয়ে কোনো ঘুষ দেওয়া হয়েনি এবং মধ্যস্থতার ভূমিকা ছিল না। এর পর ঘুষের অভিযোগের তদন্তে জন্যে একটি "যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)" গঠন করা হয়। এর নেতৃত্বে করেছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী "বি.শঙ্করানন্দ"।                              তদন্তের জন্য এই কমিটি সুইডেন যায় এবং বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে আসে। 18 জুলাই, 1989 সালে কমিটি তাদের রিপোর্ট পেশ করে, এবং এই রিপোর্টে দেখা যায় যে যেসব দাবি করা হয়েছিলো তা সবটাই সত্যি ছিলো এবং 1989 সালের লোকসভা ভোটে রাজীব গান্ধীর সরকার হেরে যায়।

সিবিআই তদন্ত                                                           এর পরে ভিপি সিং-এর নেতৃত্বাধীন সরকার বোফর্স নিষিদ্ধ করে দেয় এবং CBI কে এই কেলেঙ্কারি কেলেঙ্কারির তদন্ত ভার তুলে দেয়। 22 জানুয়ারী, 1990 সালে সিবিআই অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা এবং জালিয়াতির মামলা নথিভুক্ত করে। এবি বোফর্সের তৎকালীন চেয়ারম্যান "মার্টিন আরডবো, কথিত মধ্যস্বত্বভোগী ভিন চাড্ডা এবং হিন্দুজা ব্রাদার্স এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সুইস সরকারের কাছে বিচারিক সহায়তার অনুরোধের জন্য চিঠি পাঠানো হয়ে ছিলো।   

 এই কেলেঙ্কারিতে যে আসল অভিযুক্ত ছিলো "ওটাভিও কোয়াত্রোচি" তাকে ধরার জন্য সিবিআই রেড কর্নার নোটিশ জারি করে, যাতে তাকে ভারতে এনে কোর্টে পেশ করা যায়। তবে বারে বারে সরকারের বদল ও সিবিআই এর কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে যারা মূল অভিযুক্ত তার বিভিন্ন সময়ে জামিন পেতে থাকে ।                                          অবাক ব্যাপার হলো যারা এই কেলেঙ্কারি তে অভিযুক্ত ছিলো এবি বোফর্সের এজেন্ট ভিন চাড্ডা, কোয়াত্রোচি, তৎকালীন প্রতিরক্ষা সচিব এসকে ভাটনগর এবং বোফর্স কোম্পানির প্রেসিডেন্ট মার্টিন কার্ল আরডবোর তারা এই তদন্ত চলাকালীন মারা যায়।

তদন্তে গাফিলতির ফলে মূল অভিযুক্ত পলাতক          জোগিন্দর সিং যখন সিবিআইয়ের প্রধান ছিলেন, তখন সংস্থাটি সুইডেনের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ দলিল আনতে সফল হয়েছিল। জোগিন্দর সিং তারপরে দাবি করেছিলেন যে মামলাটি সমাধান হয়েছে। যদি কোনও বিলম্ব হয়, তবে কোয়াট্রোকিকে ভারতে প্রত্যর্পণ করতে এবং আদালতে এটি উপস্থাপন করতে। তার প্রত্যাহারের পরে, সিবিআইয়ের পদক্ষেপটি বদলে যেতো। এদিকে, অন্যরকম ঘটনা ঘটলো, যে কোয়াট্রোকি প্রমাণের অভাবের জন্য জামিন পেয়ে যায়। দিল্লির একটি আদালত যখন হিন্দুজা ব্রাদার কে মুক্তি দেয়, সিবিআই ও পরে লন্ডন আদালতকে বলেছিল যে কোয়াট্রোকির বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই। আদালত কোয়াট্রোকির সিল অ্যাকাউন্ট খোলার আদেশ জারি করে। ফলস্বরূপ, কোয়াট্রোকি রাতারাতি সেই অ্যাকাউন্টগুলি থেকে অর্থ প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। 

তদন্ত শুরু করার চেষ্টা                                              অবশেষে এই তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়। পরে অবশ্য সিবিআই এই তদন্ত শুরু করার চেষ্টা করে, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে আর্জি দেওয়া হলে তা খারিজ হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট বক্তব্য যে, এত বছর ধরে একটা তদন্ত চলা সত্ত্বেও সিবিআই কেনো এতদিন একটা প্রমাণও দিতে পারেনি। কেনো মূল অভিযুক্তদের কোর্টে পেশ করতে পারেনি। 


               

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হোয়াটসঅ্যাপ ভারতে তার পরিষেবাগুলি বন্ধ করার "হুমকি" দিয়েছে, এনক্রিপশন মামলায় দিল্লি হাইকোর্টে বললো এই কথা

জেনে নিন ভারতীয় রেল সংক্রান্ত মজার তথ্য

ভারতের সবচেয়ে বয়স্ক হাতি "বিজুলি প্রসাদ" ৮৯ বছর বয়সে জীবন যাত্রা শেষ করলো