আপনি কী জানেন আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে দুরত্ব কত? চলুন জেনেনি
পৃথিবীতে সাতটি মহাদেশ আছে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আন্টার্কটিকা। এদের মধ্যে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপের সীমানা একসাথে ভূমির সাথে সংযুক্ত হয়ে একটি বড় মহাদেশ অ্যাফ্রোইউরেশিয়া গঠন করেছে। বিশ্বের মোট স্থলভাগের ৫৭ শতাংশ এবং বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ এখানেই রয়েছে। এদের মধ্যে অদ্ভুত ব্যাপার হল এশিয়া ভূমির দ্বারা ইউরোপ ও আফ্রিকার সাথে সংযুক্ত কিন্তু আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে সরাসরি ভূমি সংযোগ নেই।
আফ্রিকা ও ইউরোপের সবচেয়ে কাছাকাছি অংশের দূরত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার কিন্তু তাও আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই।
একবিংশ শতাব্দীতে যেখানে মহাকাশ ভ্রমন পর্যন্ত শুরু হয়ে গেছে, মঙ্গলে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে, অসাধারন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্বতের চূড়া থেকে শুরু করে জলের নীচে পর্যন্ত স্থাপনা চলছে, এমনকী তুষরাবৃত আন্টার্কটিকাতে পর্যন্ত মানুষ পৌঁছে গেছে সেখানে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরত্ব কেনো এখনও পর্যন্ত সংযোগ করা হয়নি!
বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা টানেল ১৬৪ কিলোমিটার লম্বা যা চীনের দানিয়াং ও কুনশাং প্রদেশকে সংযুক্ত করে।
ইংলিশ চ্যানেলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে সংযুক্ত করা জলের নীচে টানেলের দৈর্ঘ্যও ৫১ কিলোমিটার।
তাহলে জিব্রাল্টার প্রনালীতে আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে ১৪ কিলোমিটার এই দূরত্বকে কেনো কোন সেতু বা জলের নীচে থাকা টানেলের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়নি? অতীতে কী কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল এই দূরত্বকে সংযুক্ত করার!! এই ব্যাপারেই বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
জিব্রাল্টার কাকে বলে?
আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে এই ১৪ কিলোমিটার দূরত্বকে জিব্রাল্টার প্রনালী বলা হয়। প্রনালী মানে দুটি বড় স্থলভাগের মাঝে সংকীর্ন জলভাগ যা দুই স্থলভাগকে আলাদা করে। জিব্রাল্টার প্রনালী আফ্রিকার মরোক্ক ও ইউরোপের আইবেরিয়ান অঞ্চলকে আলাদা করে।
৫৫ কিলোমিটার লম্বা ও স্থান বিশেষে ১৪ থেকে ৪২ কিলোমিটার চওড়া এই জিব্রাল্টার প্রনালী আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরকে সংযুক্ত করে।
ইউরোপের শেষ শহর তারিফা এবং মরোক্কর পয়েন্ট সাইরাসের মধ্যে দূরত্ব সবচেয়ে কম ১৪ কিলোমিটার।
১৮৬৯ সুয়েজ ক্যানেল তৈরি হবার পর জিব্রাল্টার প্রনালীর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। এর আগে ভারত মহাসাগর থেকে কোন জাহাজকে ভূমধ্যসাগরে পৌঁছাতে হলে ৫০০০ মাইলের সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হত কিন্তু সুয়েজ খাল তৈরির ফলে এই দূরত্ব অনেক কমে যায়। যার কারনে জিব্রাল্টার প্রনালীতে বানিজ্যের পরিমান বেড়ে যায়।
ইউরোপে আর আফ্রিকা কে কখনো জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো ?
অতীতে অনেকবার ইউরোপ ও আফ্রিকাকে সংযুকক্ত করবার চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রথম চেষ্টা করা হয় বিংশ শতকের প্রথমের দিকে ১৯২০ সালে, জার্মানির স্থপতিবিদ হার্মান মিলার সরগেল অ্যাটলানট্রোপা প্রজেক্টের কথা বলেন যাতে ইউরোপ ও আফ্রিকাকে সংযুক্ত করা যায়।
এর জন্য তিনি একটি ইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরির প্রস্তাব দেন যাতে এই অঞ্চলে একটি ৮০ মাইল লম্বা ড্যাম তৈরি করা হবে। এই ড্যাম ৫০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরিতে সক্ষম হত যা স্থানীয় অঞ্চলে বিদ্যুৎ এর চাহিদা মেটাতে সক্ষম ছিল। কিন্তু এতে সমস্যা হত যে কয়েক দশকের মধ্যে ভূমধ্যসাগরের জলস্তর কিছুটা কমে যেত, যার জন্য জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাডলফ হিটলার এই প্রজেক্টের সম্মতি দেয়নি।
এছাড়া, 1930, 1949, 1990 সালে চেষ্টা করা হয়ে কিন্তু বিভিন্ন কারণে ইউরোপ আর আফ্রিকা কে যুক্ত করা সম্ভব হয়েনি ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন